দীর্ঘ ২৫ বছর মিথ্যা কেসে জেলে থাকার পর বেকসুর খালাস পেল ১১ জন মুসলমান

শেখ জাকির হুসেনঃ দীর্ঘ ২৫ বছর কারাগারে অতিবাহিত করার পর অবশেষে ২৭ ফেব্রুয়ারি ১১ জন মুসলমানকে সন্ত্রাসের মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি দিল নাশিকের বিশেষ টাডা আদালত। যথেষ্ট প্রমাণের অভাব এবং তদন্তে টাডা আইনের নির্দেশিকা লঙ্ঘনের উল্লেখ করে বিচারক এস সি খাটি তাদের বেকসুর খালার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

ডানপন্থী হিন্দু আতঙ্কবাদীদের হাতে বাবরী মসজিদ ধ্বংসের পরে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৯৯৪ সালে নিষ্ঠুর টাডা আইনের অধীনে এই ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

বাবরী মসজিদ ধ্বংসের প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করার মিথ্যা অপবাদে এদেরকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তকারী সংস্থাও তাদেরকে ভুসাওয়াল জিহাদ নামক সন্ত্রাসবাদী দলের সদস্য হিসেবে অভিযুক্ত করে।

যে ১১ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন জামীল আহমেদ, আব্দুল খান, মুহাম্মদ ইউনুস, মুহাম্মদ ইসহাক, ফারুক খান, নাজীর খান, ইউসুফ খান, গুলাব খান, আয়ুব খান, ইসমাইল খান, ওয়াসিমুদ্দিন, শামসুদ্দিন শেখ শাফী, শেখ আযীম,আশফাক সায়ীদ মুর্তজা মীর, মুমতাজ সায়ীদ মুর্তজা মীর, মুহাম্মদ হারুন, মুহাম্মদ বাফাতি এবং মাওলানা আব্দুল কাদির জাইবী।

টাডা আইনের অনুচ্ছেদ ৩ (৩), ৪ (৫), ৪ (১) এবং ভারতীয় প্যানেল কোডের ১৫৩ (খ); ১২০ (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অভিযুক্ত এই মানুষগুলির মুক্তি দেওয়ার দীর্ঘ লড়াই লড়ে আসছিল জামাত উলামায়ে হিন্দ এর আইনজীবীরা।

আইনজীবীরা অভিযুক্তদের এই মর্মে প্রতিরোধ করেছেন যে তাদের স্বীকারোক্তি জোরপূর্বক নেওয়া হয়েছে এবং তা কোর্টের সরকারী খাতাই লিপিবদ্ধ করা হয়নি। তাঁরা এটাও বলেন আদালতকে এই কেস সাক্ষীদের বিবৃতি লিপিবদ্ধ করতে দেরী হয়েছে এবং অভিযুক্তদের একজনকে সরকারী সাক্ষী হিসেবে কোর্টে পেশ করা হয়। সেটাকে তারা অসাংবিধানিক হিসেবে ঘোষণা করে। তারা এটাও বলেন, যে সংগঠনের সদস্য হিসেবে তাদেরকে উল্লেখ করা হয়েছে সেই সংগঠনটি বেআইনি নয়। আইনজীবীরা এই বলেও যুক্তি দেখান যে এই মামলা কোন চূড়ান্ত প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।

জামায়াতে উলামায়ে হিন্দের আইনী বিভাগের দায়ীত্বশীল গুলজার আজমী বলেন, “ন্যায়বিচার প্রত্যাখাত হয়নি। কিন্তু এই মানুষগুলো জীবনের এর মূল্যবান বছর হারিয়েছে। এর দায় কে নেবে? সরকার কী তাদের ক্ষতিপূরণ দেবে? আর পারবে তাদের হারানো সম্মান ফিরিয়ে দিতে?”

তিনি আরও বলেন, “এই মামলার অর্ধেকেরও বেশী সাক্ষী কোর্টের মধ্যেই বিদ্রোহ করে বসে। এটাই প্রমাণ করে যে, এই মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যার উপর তৈরি করা হয়েছিল। এমনকি রিভিউ কমিটিও এই মানুষগুলোকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে কিন্তু নিম্ন আদালত তা মানতে রাজি হয়নি। যার কারণে এই ১১ জন এমন ভুলের ফল ভোগ করতে হলও যা তাঁরা কখনো করেইনি আর কোর্ট কাছারীতে তাদের দৌড়াদৌড়ি করতে হয় ২৫ বছর ধরে।”

জামাতে উলামায়ের পক্ষ থেকে যারা মামলা লড়েছেন তাঁরা হলেন, আইনজীবী শরীফ শেখ, মতিন শেখ, রাজ্জাক শেখ, শাহিদ নাদিম আনসারি, মুহাম্মদ আরশাদ, আনসারি তাম্বোলী প্রমুখ।

লেখাটি TheCognate.com প্রথম প্রকাশিত। দিনকাল ডট ইন এর জন্য ইংরেজি থেকে ভাষান্তর করেছেন মুদাসসির শেখ

Back To Top