মুসলিম নারীদের কাছে লেখা খ্রিস্টান সাংবাদিকের খোলা চিঠি

 

আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ রইলো চিঠিখানা একটু সময় নিয়ে পড়বেন। (বিখ্যাত লেখিকা,সাংবাদিক, শিক্ষিকা এবংCo-founder of Feminenzaজোয়ান ফ্রান্সিসের এ চিঠিটি প্রকাশিত হয় ৭ মার্চ ২০০৭ সালে ইউএসএ টুডে পত্রিকায়। স্পিরিচ্যুয়াল জার্নির ওপর তার বিখ্যাত বই ‘Rainbow Woman’আমাজন বেস্ট সেলার। মহিলাদের সার্বিক মানোন্নয়নে তিনি পৃথিবী ব্যাপী কাজ করে যাচ্ছেন।)

আমি পৃথিবীর সমস্ত নিপীড়িত, নির্যাতিত অসহায় মুসলিম বোনদের আমার এ চিঠিখানা পড়ার জন্য সবিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। আশাকরি চিঠিটি মনোযোগ দিয়ে ধৈর্য্য সহকারে পড়বেন এবং অন্য বোনদের সাথে শেয়ার করবেন। -বিনীত জোয়ানা ফ্রান্সিস।

প্রিয় বোন আমার,
আমার বিনম্র শ্রদ্ধা গ্রহণ করুন। আজ বড়ই বেদনাবিঁধুর মন নিয়ে এ চিঠি লিখছি। লেবানন, ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলের এই নিষ্ঠুর অত্যাচার আর মুসলিম সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মানবতাদী যুদ্ধের যে প্রহসন চলছে, তার ফলে আমেরিকার প্রতিটি ঘরে আজ “মুসলিম” নামটি বিশেষভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তোমরা সন্ত্রাসী, তোমাদের রক্তের মাঝে, প্রতিটি ধমনীতে, শিরায়, কোষে সন্ত্রাসের বিভৎস বীজ রোপিত বলে আজ অনেকেরই বিশ্বাস।

আমি প্রতি মুহুর্তেই দেখছি ঐ মৃত্যুভূমিতে শিশুর চীৎকার, লাশের মিছিল, রকেট লান্চারের গর্জন, রাইফেল থেকে গুলি ছুটে গিয়ে কোনো শিশুর মগজ বিদীর্ণ হয়ে যাওয়ার দৃশ্য। কিন্তু এর পাশাপাশি বিশ্বাস করো বোন আমার, আমি শুধু তোমাদেরই দেখছি। জানি আমি কোনো সাহায্য করতে পারবোনা। আমি দেখছি কোলের মাঝে তোমাদের গলা জড়িয়ে তোমাদের আদরের ফুটফুটে সন্তান। আমি অবাক হয়ে যাই, এতো গোলাবারুদ, যুদ্ধ, মারণাস্ত্রের গর্জনের মাঝেও তোমাদের চেহারা থেকে স্বর্গীয় স্নিগ্ধতা এক মুহুর্তের জন্যও ম্লান হয়ে যায়নি। কেমন করে পারো প্রিয় বোন আমার?

আমি আরেকটি জিনিস লক্ষ্য করি। সেটা হলো আমার হিংসা। তোমাদের প্রতি আমার প্রচন্ড হিংসা। প্রতি মুহুর্তে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তোমাদের এইযে সাহস, এই যে দীপ্তিমান চেহারার সুষমা, এতো লাবণ্য সর্বোপরি এতো স্বর্গীয় সুখ তোমাদের অবয়বে ফুটে ওঠে তাতেই আমার বড় হিংসা হয়।

এ এক অদ্ভূত ব্যাপার বোন আমার। প্রতিনিয়ত বোমা আর মৃত্যুর সাথে বাস করেও তোমাদের যে অকৃত্তিম সুখ অনেক প্রাচুর্য্যের মাঝে থেকেও সে সুখ আমাদের নেই। এর কারণ কি জানো, কারণ তোমরা একজন স্বভাবজাত রমনীর সবকিছু ধরে রেখেছো। আর আমরা দিনে দিনে কেবলি নটি হয়ে ওঠছি।

সেই সভ্যতার শুরু থেকেই আমরাও প্রকৃতিগতভাবে একজন রমনী যেরকম হওয়ার কথা সেরকমই ছিলাম। ঠিক তোমাদের মতো। কিন্তু ১৯৬০ সাল থেকেই শুরু হয়, আমাদের ওপরও বোমাবাজি, প্রতিটি সেকেন্ডে, প্রতিটি মুহুর্তের জন্য। আর এটা কোনো বহিঃশত্রুর না। চিন্তা করছো বুঝি কিসের বোমা?
বিশ্বাস করো, বোমা মেরে ফিলিস্তিন, লেবাননকে কোনোদিন ধ্বংস করা যাবেনা। বোমায় কোনো জাতি নিশ্চিহ্ন হয়না। যেমন হয়নি হিরোশিমা, নাগাসাকি। তবে এমন বোমা রয়েছে যা একটা জাতির নৈতিকতাকে চির অধঃপতনে নিয়ে যায়। আমারা সেই নৈতিক অবক্ষয়ের বোমার স্বীকার। এ বোমায় কোনো শব্দ হয়না,কোনো রক্তপাত হয়না, কিন্তু প্রতি ঘরে ঘরে সুখের অন্তরালে বেদনার শব্দহীন অশ্রুপাত হয়।

তাইতো বোমার আঘাত না পেয়েও আমরা কাঁদি, আর বোমায় তোমাদের প্রতি ইন্চি ভূমি ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পরও তোমাদের চেহারা থেকে সেই স্বর্গীয় স্নিগ্ধতা কেউ কেড়ে নিতে পারেনা। আমার সত্যিই তাই হিংসা হয়। খুব হিংসা।

আমাদের নিজস্ব তৈরী ফাইটার জেট, ট্যাংক থেকে এ বোমা নিক্ষিপ্ত হয়নি। হলিউডি নগ্ন আর মুক্ত যৌনতার বোমা আমাদের পরিবার, সমাজকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে।

আমরা জানিনা আজ আমাদের সন্তানের পিতা কে? তোমার জানো কি না জানিনা,আমাদের সন্তান “সিংগল মাম” এই পরিচয়ে বড় হয়। বিবাহ বহির্ভূত সন্তানে আজ সয়লাব হয়ে গেছে পুরো আমেরিকা। অনেক সময় নিজের কন্যা বড় হয়ে মায়ের বয়ফ্রেন্ডের সাথে অভিসারে জড়িয়ে পড়ে, এর চেয়ে আর বড় বোমাবাজি কি হতে পারে বলো বোন আমার। তোমাদের ওপর যে বোমাবাজি হয়, তাতে আমার দুঃখ হয় আর আমাদের ওপর এ বোমায় আমার ভিতরে গোঙ্গানি আর আর্তনাদের শব্দ হয়। এ কান্না মেকি সভ্যতার আবরণে ঢাকা পড়ে যায়। কেউ দেখতে পায়না।

আমি একজন নারী হিসাবে চাই, আমাদের মাঝে এই যে বেদনা তা পৃথিবীর আর কোনো মা-বোনকে যেন এই দুর্বিষহ, অভিশপ্ত জীবনের ভিতর দিয়ে যেতে না হয়।

কিন্তু ওরা অত্যন্ত সন্তর্পনে এভাবেই এগোচ্ছে। অবাধ স্বাধীনতা আর মিথ্যা সুখের প্রলোভন দেখিয়ে তোমাদের ঘরের, তোমাদের সংসারের সেই স্বর্গীয় সুখের পায়রাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিতে চায়।

একজন রোগগ্রস্ত মানুষই বুঝে তার যন্ত্রণা। যেহেতু আমরা সেই যন্ত্রণার ভিতর দিয়ে যাচ্ছি, তাই অনুগ্রহ করে প্রিয় বোন আমার কথাগুলো মন দিয়ে শোন তবে তোমরা এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পারো।

হলিউড থেকে যা বের হয় তা শুধু মিথ্যার প্যাকেজ ছাড়া কিছুই নয়। বাস্তবতার সাথে এ নগ্ন, যৌনবিকার সভ্যতার কোনো মিল নেই। এ শুধু মিথ্যা, প্রহেলিকা,মরীচিকা আর আলেয়া।

পারস্পরিক সম্মতিতে যৌনতার নামে যে নির্দোষ বিনোদনের ফেরি হচ্ছে আমেরিকার তথাকথিত সভ্যতায়, তা শুধুমাত্র এক বিষের পেয়ালা ছাড়া আর কিছুনা। প্রিয় বোন আমার ভুল করেও এ বিষের পেয়ালায় ঠোঁট লাগিওনা। কারণ এ এমন এক বিষ যার কোনো প্রতিষেধক নেই। শুধু আছে নৈতিক মৃত্যু। মানুষ তখন এক পশু হয়ে যায়। পশুর কি আর নৈতিকতা আছে বলো?

চলচ্চিত্র, মিউজিক ভিডিও, নানা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ওরা পৃথিবীকে দেখাতে চায় মুক্ত যৌনাচার আর অবাধ স্বাধীনতায় আমেরিকার রমনীরা খুবই সুখি আর পরিতৃপ্ত। মিথ্যা একেবার ডাহা মিথ্যা। এরচেয়ে বড় ধোঁকা আর এরচেয়ে বড় জোচ্চোরি আর নেই। ওরা প্রচার করে রাতের আঁধারে খদ্দের স্বীকারি পতিতাদের মতো অশালীন পোষাক পরে আমরা খুবই গর্বিত।

বিশ্বাস করো বোন আমার, এতে নিজেকে সস্তায় মুক্ত পণ্য হিসাবে নিজেকে বিকিয়ে দেয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা কুকুর ,বিড়াল সহ নানা পোষা প্রাণীকে এখন কাপড় পরাই আর নিজেরাই অন্যদিকে নগ্ন হয়ে যাই। ধিক এ সভ্যতাকে। বোন আমার বুঝতে পারছো এ কেমন বিষাক্ত বিষ।

মিলিয়ন মিলিয়ন আমেরিকার রমনীরা আজ ডিপ্রেশানে ভুগছে। ফার্মেসির কাউন্টার এন্টি ডিপ্রেশান পিলে ভরে গেছে। রাতে ঘুমের পিল না খেলে আমাদের ঘুম হয়না। কাজের মাঝে আমরা অবসন্ন হয়ে পড়ি। প্রেমিকের নামে শত শত লম্পট আমাদের ব্যবহার করে ছুঁড়ে দিয়ে চলে গেছে। সন্তান, মাতা-পিতার বন্ধন,সংসারের সুখ ,সেই মধুর ভালোবাসা আজ বিলীন অথবা বিপন্ন।

ওরা বুঝাতে চায় বিবাহ হলো দাসত্ব, মাতৃত্ব হলো অভিশাপ আর সবচেয় ভয়ঙ্কর হলো ওরা বুঝাতে চায় সতীত্ব রক্ষা করা, পুতপবিত্র থাকা ওল্ড ফ্যাশান ছাড়া আর কিছুই নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top