ধর্মীয় আচার পালনে হুমকি!

ধর্মীয় আচার নিয়ম পালনের স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলছে মানুষ দিন দিন। চারিদিকে শুরু হয়েছে এক ধর্ম অন্য ধর্মের প্রতি বিরূপ মনোভাব। নিজের শক্তির বল প্রয়োগ করে অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি চালু করছে এক দুঃসাহসিকতার অত্যাচার। মানুষের ব্যক্তিগত ধর্মীয় স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে এক দল শাসক গোষ্ঠী। কে কোন ধর্ম পালন করবে সেটা তার ব্যক্তিগত অধিকার। এখানে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। চিন সরকার জোর করে মুসলিম ধর্মীয় সংস্কৃতি গুলি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সেখানে এই রমজান মাসের রোজা রাখতে বাঁধা প্রদান করে আসছে কয়েক বছর থেকে। রোজাদার ব্যক্তিকে জোরকে খাবার খাওয়ে রোজা ভেঙে দিচ্ছে। উইঘুর মুসলিমদের উপর চরম নির্যাতন শুরু করেছে তারা। চিন থেকে মুসলিমদের উৎখাত করাটায় তাদের একমাত্র লক্ষ্য।  গত সপ্তাহের শেষদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক রিপোর্টে বলা হয়, রোজা রাখার পাশাপাশি দাড়ি রাখা, মাথায় কাপড় দেয়া, নিয়মিত নামাজ আদায় এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলাসহ ধর্মীয় বিষয়গুলোকে চীনের কর্তৃপক্ষ চরমপন্থার চিহ্ন মনে করছে। গত তিন বছরে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে ৩১টি মসজিদ ও দুটি ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে।

        সারা বিশ্বে এক সম্প্রদায় পৃথিবী থেকে মুসলিমদের মুছে দিতে চাইছে। যেমন কিছু দিন আগে নিউজিল্যান্ডের এক মসজিদে ঢুকে নামাজরত মুসল্লিদের এলপাথারী গুলি করে প্রায় ৫০ জনকে হত্যা করল এক খ্রিস্টান সন্ত্রাসী। এই ঘটনায় দোষী সন্ত্রাসীকে কিছু কিছু মিডিয়া সন্ত্রাসী বলতে চাইনি । তারা বলেছে বন্ধুকধারী। এই রকম অনেক ঘটনার সুত্রপাত হচ্ছে সারা বিশ্বে। গত বৃহস্পতিবার লন্ডনে তারাবির নামাজে গুলিবর্ষণের ঘটনায় ইলফোর্ড এলাকার সেভেন কিংস মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে তারাবির নামাজের সময় এ ঘটনা ঘটে। এবার আসি মায়ানমার প্রসঙ্গে। মায়ানমারে প্রায় হাজার হাজার  মুসলিমকে হত্যা করেছে সেখানকার উগ্র বদ্ধগোষ্ঠী, সাথে সরকার। হত্যা করেই শান্ত হয়নি বাকি মুসলিম জনগোষ্ঠীকে জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কি কষ্টে যে তারা দিন যাপন করছে ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।   

        ভারত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হলেও এখানেও মুসলিমরা কিন্তু শান্তিতে বসবাস করছে বলা যায় না।  কিছু সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে এবং তাদের একমাত্র লক্ষ্য ভারত থেকে মুসলিমদেরকে বিতাড়িত করা। এর মধ্যে  রয়েছে আর এস এস, বজরঙ দল, বিশ্বহিন্দু পরিষদ। তারা নিয়ত মুসলিমদের উপর অত্যাচার করে চলেছে। কখনো গো- মাংসের নামে আবার কখনো লাভ জেহাদের নামে নিরীহ মুসলিমদের হত্যা করছে। ভারতবর্ষে একাধিক হিন্দু- মুসলিম দাঙ্গা বাঁধিয়ে মুসলিমদের গণহত্যা করেছে। এর দৃষ্টান্ত স্বরুপ বলা যেতে পারে গুজরাট , মোজাফফনগর, দেশ ভাগের সময় অসংখ্য মানুষ মারা গিয়েছে। আবার নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে বিজেপি সরকার এন আর সি-র নামে। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ্‌ পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে, যে সমস্ত হিন্দুরা বাইরে থেকে এসেছে তারা নাগরিকত্ব পাবে কিন্তু মুসলিমরা পাবে না। যদি বিজেপি পুনরায় ক্ষমতায় আসে তো মুসলিমদের উপর আরও বিভিন্ন রকম নির্যাতন চালাতে চাইবে।

        কিন্তু আমাদের দমে, ভয়ে চুপ হয়ে গেলে চলবে না। সমস্ত ভারত তথা বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। আজ মুসলিমরা অত্যাচারিত, নিপীড়িত, বাকি অন্যান্য ধর্মের লোকেরা চুপ থাকলে হবে না। কারণ দেহের একাংশে বিষফোঁড়া হলে সেই অংশের ব্যাথা হবে আর অন্য অংশে হবে না এটা নয়। তাই আমাদের সকল ধর্মের মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। অন্যায়কারী যতই শক্তিশালী হক না কেন ? তারা সংখ্যায় অনেক কম। তাই এই শান্তির পরিবেশ তৈরী করতে হবে। যে যার ধর্ম সে তা পালন করবে। আমাদের দলবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

(ইয়াসিন)

Back To Top